নান্দাইল প্রতিনিধি:  ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে এক কিশোরীর মৃত্যু নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিশোরীর বাবা বলছেন, ধর্ষণের পর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ জন্য তিনি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন দমন আইনে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে অভিযুক্ত উচাখিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করা হয়েছে, মস্তিষ্কে টিবি ছড়িয়ে পড়ার কারণে ওই কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। আদালতে দেওয়া অভিযোগের বিবরণ ও বাদীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে জানা যায়, ঘটনায় ১ নম্বর অভিযুক্ত করা হয়েছে উপজেলার উচাখিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলামকে। তাঁর বিরুদ্ধে বাদীর মেয়ের (১৬) সঙ্গে অনৈতিক মেলামেশা করার ফলে অন্তঃসত্ত্বা হওয়া ও পরে গর্ভপাত ঘটানোর সময় রক্তক্ষরণে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যানের বড় ভাই মো. মঞ্জুরুল হকের বিরুদ্ধে পুরো ঘটনাটি নানা কৌশলে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিজ্ঞাপন গত রোববার ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রাফিজুল ইসলামের আদালতে অভিযোগটি দায়ের করেন কিশোরীর বাবা। গত মঙ্গলবার বিচারক ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সাত কর্মদিবসের মধ্যে বাদীর অভিযোগটি প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর) হিসেবে নিবন্ধন করে আদালতকে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীর আইনজীবী মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের অভিযোগ বিজ্ঞ বিচারক শুনেছেন। আমরা ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় রয়েছি।’ বাদীর অভিযোগ, তাঁর সাবেক স্ত্রী ও সন্তানেরা আওয়ামী লীগের নেতা মঞ্জুরুলের বাসভবনসংলগ্ন সরকারি জমিতে বসবাস করেন। তিনি অন্যত্র থাকেন। ১২ মে তাঁর ছোট মেয়ে (১৬) মারা যায়। উচাখিলা বাজারে তড়িঘড়ি করে মেয়ের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁকে দাফন করা হয় ইসলামপুর মাদ্রাসার সামাজিক কবরস্থানে। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁর মেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুলের ইসলামের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে তার গর্ভপাতের চেষ্টা করা হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নানা জটিলতার শিকার হয়ে মারা যায়। আদালতে অভিযোগ দায়েরের পর থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হুমকির মুখে বাদী (৪৮) পালিয়ে অজ্ঞাত স্থানে অবস্থান করছেন বলে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন। বাদীর সঙ্গে ২০১৭ সালে তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয় বলে জানা গেছে। বাদীর অভিযোগে তাঁকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মেয়ের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কিশোরীর মা রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে মারা যাওয়ার মৃত্যুসনদ (ডেথ সার্টিফিকেট) দেখান। এর বাইরে তিনি কিছু বলতে চাননি।

এদিকে উচাখিলা ইউপি ভবনের বারান্দায় আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষর করা বক্তব্য পাঠ করেন তাঁর ভাতিজা মো. নায়েবে জাহান।

তিনি বলেন, তাঁর বাবা ও চাচার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। স্বর্ণার মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কের টিবি (টিউবাসকুলার) ছড়িয়ে পড়ার কারণে। এ ঘটনাটি পুঁজি করে তাঁর চাচাকে ইউপি নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখার অপচেষ্টা করছে একটি চক্র। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করার দাবি জানিয়েছেন। এই সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদের মিয়া বলেন, আদালতের কোনো নির্দেশনা এখনো তাঁর কাছে আসেনি। নির্দেশনা পেলে সেই অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।